ফুলে রঙ করা

ফুলে রং করার প্রচলন নতুন কোনো বিষয় না, সহস্রাব্দ আগে থেকে এখন পর্যন্ত চলছে। ধারণা করা হয়, ফুলে বিচিত্রতা এবং ব্যবসায়ে নতুনত্ব সংযোজনের লক্ষ্যে এই পদ্ধতির উদ্ভব।

 প্রচলিত কিছু পদ্ধতি হচ্ছে- * স্প্রেয়িং(Spraying)- এক্ষেত্রে ফ্লোরাল স্প্রে ব্যবহার করে সাদা ফুলকে পছন্দমতো রং করা হয়।
 • ডিপ ডাই(Deep dye)- ফুলকে রং মেশানো পানিতে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রেখে পানি দিয়ে হালকা ধুয়ে শুকিয়ে নেয়া হয়।
 • টাই-ডাই(Tie-dye)/অ্যাবসরপশন ডাই(Absorption dye)- ফুলের ডাল কেটে রং মিশ্রিত পানিতে ১২/২৪ ঘন্টা রেখে দিতে হয়। ফুল রং মিশ্রিত পানি শোষণ করে। ফলে, পাপড়িতে বর্ণবৈচিত্র্য ঘটে। 

টাই-ডাই(Tie-dye)/অ্যাবসরপশন ডাই(Absorption dye) এর মাধ্যমে ফুলকে রং করার পদ্ধতি বেশি জনপ্রিয়। এ সম্পর্কেই লিখছি- টাই-ডাই(Tie-dye)/অ্যাবসরপশন ডাই(Absorption dye) হচ্ছে মূলতঃ ফুলের ডাল কেটে রং মিশ্রিত পানিতে ১২/২৪ ঘন্টা রেখে দেয়ার মাধ্যমে ফুলে রঙ করার পদ্ধতি। এতে করে ফুল রং মিশ্রিত পানি শোষণ করে এবং পাপড়িতে বর্ণবৈচিত্র্য ঘটে। 

ফুলে রঙ করতে যা যা লাগবেঃ
 ১. টাটকা সাদা ফুল,
 ২. ফুড কালার ও পানি,
 ৩. গ্লাস/জার,
 ৪. ধাঁরালো ছুড়ি/কাঁচি,
 ৫. সুতা/স্কচটেপ ইত্যাদি। 

প্রণালিঃ ১. প্রথমে ঠিক করতে হবে কোন ফুলে আপনি রঙ করতে চান। গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, জারবেরা, কারনেশন, গ্লাডিওলাস দিয়ে এই কাজ বেশি করা হয়। ফ্লোরিষ্টদের মতে, গোলাপের ক্ষেত্রে হাইব্রিড যেমন- ভেনডেলা, লা বেলে, অ্যাভাল্যাঞ্চ প্রভৃতি গোলাপগুলো ভালো রঙ শোষণ করতে পারে। আর রঙ এর পরিবর্তন ভালো বোঝা যায় সাদা রঙের ফুলে। 
২. এবার গ্লাসে বা আপনার পছন্দমতো পাত্রে পানি ঢেলে ফুড কালার মিশিয়ে নিন। এক্ষেত্রে, ট্যাপ ওয়াটার/হালকা গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন। একটি পাত্রে একটি রঙ মেশাতে হবে। রঙ্গিন পানির উপর নির্ভর করে ফুলের রঙ কেমন হবে অর্থাৎ রঙ হালকা হলে ফুল হালকা রঙের হবে। 
৩. এবার ফুল ঠিক করে নিন অর্থাৎ ১০-১২ ইঞ্চি লম্বা ডাল রেখে বাকী অংশ কেটে ফেলতে হবে অথবা আপনার সুবিধাজনক লম্বা ডালসহ ফুল নিতে পারেন। ডালে থাকা পাতাগুলোও কেটে কমিয়ে নিতে হবে। ফুলের কান্ড নিচের দিক থেকে ১-২ ইঞ্চি পরিমাণে দুইভাগে ভাগ/কেটে নিন। যাতে রঙ্গিন পানিতে রাখার পর ফুলগুলো তাড়াতাড়ি পানি শোষণ করে নেয়। 
৪. এবার ফুল রঙ্গিন পানিতে রাখার পালা। একটি ফুল একটি গ্লাসে রাখলে ফুলটি এক রঙের হবে। দুইটি গ্লাসে ছবির মতো করে রাখলে একই ফুলে দুইটি রঙ হবে। ফুলের ডাল মোটা ও বড় হলে সহজেই আরো বিভিন্ন রঙ মিশ্রিত পানিতে ফুল রাখা যাবে। এক্ষেত্রে, রঙের উপর নির্ভর করে ডাল কাটতে হবে যেমন- ডাল তিন ভাগ করে তিন রঙের পানিতে বা চার ভাগ করে চার রঙের পানিতে রাখতে হবে। 
. সুতা/স্কচটেপ/কোনো অবলম্বনের সাহায্যে ফুলকে সোজা করে এর ডালগুলো রঙ্গিন পানিতে রেখে দিতে হবে ১২-২৪ ঘন্টা। ২-৩ ঘন্টা পরই ফুলের পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। 
৬. ১২-২৪ ঘন্টা পর ফুলগুলো ব্যবহার উপযোগী।

 কিছু কথাঃ ১. ফুলের কোন পাপড়ি কোন রঙের হবে এটা ফুলের উপর নির্ভরশীল। লাল-নীল রঙের পানিতে একটি ফুল রেখে এক্সপেরিমেন্ট করে অর্ধেক লাল আর অর্ধেক নীল হতে দেখেছি। হলুদ-সবুজেও একই ঘটনা ঘটেছে। যদিও রেইনবো রোজ এ একেক পাপড়িতে একেক রঙ দেখা যায়। কিভাবে হলো? এর উত্তর এখনো খুঁজে পাইনি। 
২. ১২-২৪ ঘন্টা সময়কাল ফুল সরাসরি বাতাস ও সূর্যালোক থেকে দূরে রাখতে হবে। 
৩. কোন ফুল কতটা রঙ শোষণ করবে অথবা আপনার সফল হওয়া নির্ভর করবে ফুলের উপর। হতে পারে সবগুলো ফুল সুন্দরভাবে রঙ শোষণ করেছে, আবার এমনও হতে পারে সবগুলো ফুলই পারবো না বলে ঘাড় নত করে দিয়েছে। 
৪. কালো গোলাপ দেখার এবং চারা কেনার ইচ্ছে তো অনেকেরই আছে। অথচ বাস্তবে কালো গোলাপ নেই। হাইব্রিড লাল গোলাপকে নেভি ব্লু কালারে ডাই করার মাধ্যমে ফ্লোরিষ্টরা কালো গোলাপ করছেন। 
৫. বিভিন্ন রঙ দিয়ে ফুল রঙ্গিন করার মতো চাইলে আপনি বানাতে পারেন “গ্লোয়িং ফ্লাওয়ার”। এই ফুলগুলো অন্ধকারে উজ্জ্বল দেখা যাবে। নিয়ম একই শুধু ফুড কালারের বদলে নিতে হবে লেখা হাইলাইট করার কলমের কয়েক ফোঁটা রঙ। 
৬. ফুলে গাঢ় রঙ আনতে অনেক ফ্লোরিষ্ট ব্যবহার করেন “ডিপ ডাই”। বিভিন্ন ওয়েবসাইট বলছে বাজারে পাওয়া যায়। সম্ভবত বাংলাদেশে এতো সহজে ডিপ ডাই করার রঙ পাওয়া যাবে না। 

ফুলে রঙ করার এই বিষয়টি অনেকের কাছেই ফুলের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে বলে মনে হতে পারে। অথচ এই রঙ করা ফুলের চাহিদা সারাবিশ্বে ব্যাপক। অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও এর প্রচুর চাহিদা। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Dombeya

পলক জুঁই

চামেলি