হিমঝুরি

ফুলের নাম- হিমঝুরি 
বৈজ্ঞানিক নাম- Millingtonia hortensis 

মিয়ানমারের নিজস্ব এই বৃক্ষটি আমাদের দেশে এসেছে প্রায় ২০০ বছর আগে। সুদীর্ঘ সময় ধরে আমাদের জল-হাওয়ায় নিজেকে মানিয়ে নেওয়ায় এখন দেশি গাছ হিসেবেই পরিচিত। একসময় এর মোটা বাকল থেকে নিম্নমানের বোতলের ছিপি বানানো হতো বলেই সম্ভবত কর্কগাছ নামকরণ করা হয়। বাংলাদেশে এই গাছের নাম ‘কর্কগাছ’, রবীন্দ্রনাথ নামকরণ করেছেন ‘হিমঝুরি’। হিন্দি নাম ‘আকাশনিম’। 

হিমঝুরি সুউচ্চ চিরসবুজ বৃক্ষ। খাড়া ডালপালায় নোয়ানো আগা, ছোটখাটো ডালের মতো সরু পত্রিকাবহুল পক্ষাকার যৌগপত্র। ফুল মধুগন্ধী, ফোটে রাতে, ভোরের আগেই ঝরে পড়ে, শাখান্তের বড়সড় যৌগিক মঞ্জরিতে, ছাড়াছাড়া ভাবে। ফুলগুলো সাদা ও নলাকার। নলমুখে বসানো থাকে পাঁচটি খুদে পাপড়ির একটি তারা। ফাঁকে ফাঁকে আছে পাঁচটি পরাগধানী, যেন সযত্নে বসানো রত্নপাথর, সাদা বা হলুদ; গর্ভকেশরযুক্ত। ফলগুলো সরু, লম্বা, আগা ও গোড়া ছুঁচালো, সরু সরু পক্ষল বীজে ভরাট, এক ফুট বা ততোধিক দীর্ঘ। বীজগুলো ঈষৎ স্বচ্ছ পাখনাঘেরা এবং সে কারণেই উড়ুক্কু ও দূরগামী। এই গাছ ছায়াঘন নয় এবং শিকড় অগভীর হওয়ায় ঝড়ে উপড়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই পথতরুর অনুপযোগী। বীজ ছাড়াও গাছের শিকড় থেকে গজানো চারা থেকেই বংশবিস্তার। 

উদ্ভিদবিজ্ঞানী দ্বিজেন শর্মা শ্যামলী নিসর্গ গ্রন্থে এই গাছের স্মৃতিচারণা করেছেন এভাবে: ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় আগরতলা থেকে কলকাতা চলেছি ট্রেনে। নভেম্বর মাস। এক অখ্যাত স্টেশনে ট্রেন থেমে গেল। ক্রসিংয়ের ঝামেলা। সবাই প্লাটফর্মে নেমে দু’পা হেঁটে নিচ্ছে। আমি বসলাম একটি বেঞ্চে। হঠাৎ দেখি আমার গায়ে পাশের আকাশছোঁয়া একটি গাছ থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি ফুল ঝরছে। মুহূর্তেই হিমঝুরি নাম মনে পড়ল, রবীন্দ্রনাথের দেওয়া।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি জায়গায় হিমঝুরির দেখা পাবেন, একটি- একুশ হলের বাগান আরেকটি- বিজ্ঞান গ্রন্থাগারের প্রবেশপথের বাম পাশে। 

নগরে নিসর্গ গ্রন্থে বিপ্রদাশ বড়ুয়া দ্বিতীয় গাছটি সম্পর্কে লিখেছেন: ‘বিজ্ঞানাচার্য সত্যেন বসু এ গাছের চারাটি কলকাতার শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে এনেছিলেন। তখন এখানে তাঁর বাসা ছিল।’ বলধা গার্ডেনের পাশে খ্রিষ্টান কবরস্থানের ভেতর বিভিন্ন আকারের কয়েকটি গাছ দেখা যায়। এছাড়া চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে অনেক দেখা যায়। কাঠ নরম, হালকা, হলুদ, মসৃণ এবং আসবাব ও সজ্জাকার্যের উপযোগী। ইন্দোনেশিয়ায় বাকলের তেতো রস থেকে জ্বরের ওষুধ বানানো হয়। হেমন্তে স্বল্প পুষ্পের বিপরীতে হিমঝুরির দীর্ঘ বীথি কিছুটা হলেও প্রকৃতির দীনতা ঘোচাবে 

মূল লেখা- মোকারম হোসেন 

ছবি- নেট 

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Dombeya

পলক জুঁই

চামেলি