সজিনা

ফুলের নাম: সজিনা 
বৈজ্ঞানিক নাম: Moringa oleifera Lamk. 
পরিবার: Moringaceae 
ব্যবহার অংশ: মূল, ছাল, পাতা, বীজ, আঠা, ফুল ও ফল। 

রোপনের সময় ও পদ্বতি: অঙ্গজ অংশের মাধ্যমে এর বংশ বিস্তার করা হয়। বর্ষা মৌসুমিতে রোপন করতে হয়। জন্ম ও প্রাপ্তি স্থান: বাংলাদেশে যে কোন স্থানে সজিনা গাছ জন্মায়। বসত ভীটার আঙ্গীনায়,বাগানে চাষ করে থাকে। সজিনা গাছের ধরণ: এটি একটি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। 

সজিনা গাছ ৩০ ফুট বা তার অধিক লম্বা হয়ে থাকে। ফুল সাদা, এর ফল লম্বা, বীজ পক্ষল, অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ফুল হয়। বাংলাদেশে এ নিয়ে তেমন গবেষণা না হলেও বিশ্বের বহু দেশে নানা রকমের গবেষণা হয়েছে; বিশেষ করে এ গাছ হরমোন বর্ধক ঔষধি গুণসম্পন্ন। 

আয়ুর্বেদ শ্বাস্ত্র মতে সজিনা ৩০০ প্রকার ব্যধির প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শরীরের প্রয়োজনীয় প্রায় সব ভিটামিনের সাথে আবশ্যকীয় প্রায় সবগুলি এমাইনো এসিড সজিনা পাতায় বিদ্যমান বলে বিজ্ঞানীরা একে ‘‘পুষ্টির ডিনামাইট’’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। 

সজিনার ঔষধি ও ভেষজ গুণঃ 
(১) সজিনায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ আছে। তাই এটি চোখের জন্য উপকারি। 
(২) সজিনা দেহের কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। 
(৩) বিজ্ঞানীদের মতে, সব ধরণের অ্যামাইনো এসিডছাড়াও এতে আরো এ জাতীয় ১২ ধরণের প্রয়োজনীয় উপদান রয়েছে। এগুলো দেহের পাশাপাশি বাতের জন্যও খুব উপকারী। সজিনা বীজের তেলও (আমাদের দেশে তেমন পাওয়া যায় না) বাতের ব্যথায় ভালো কাজ দেয়। এই তেলকে ‘বেন অয়েল’ বলে। এটি ঘড়ি মেরামতের কাজে লাগে। 
(৪) কুষ্ঠ রোগে এই তেল অথবা তেলের অভাবে বীজ বেটে প্রলেপ দিলে উপকার হয়। 
(৫) সজিনা দেহের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে বলে এটি ডায়বেটিস রোগীদের জন্য যথেষ্ট উপকারি। 
(৬) সজিনা পাতা পেষণ করে তাতে রসুন, হলুদ, লবণ ও গোল মরিচ মিশিয়ে সেবন করলে কুকুরের বিষ নষ্ট হয়। 
(৭) বিপাক প্রক্রিয়াকে উদ্দীপ্ত করতে সজিনার পাতা খাওয়া যেতে পারে। 
(৮) এটি হজমে সহয়তা করে এবং খালি পেটে খেলে জোলাপের মত কাজ করে। 
(৯) সজিনা পাতা শাকের মতো রান্না করে আহারের সময় অল্প পরিমাণে খেলে বল বৃদ্ধি পায় ও ক্ষুধা বাড়ে। 
(১০) পাতা বেটে ফোঁড়া বা টিউমারে দিলে উপকার পাওয়া যায় এবং ফোলা সেরে যায়। 
(১১) সজিনা পাতাকে শাক হিসেবে খাওয়া হয়। এতে শ্রমজনিত ক্লান্তি, শরীরের ব্যথা ইত্যাদি দূর হয়। এই শাক খেলে জ্বর ও যন্ত্রাদায়ক সর্দি আরোগ্য হয়। 
(১২) সজিনা পুষ্টি উৎপাদক চিনিমুক্ত এনার্জাইজার। 
(১৩) এটি ওজন হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 
(১৪) সজিনা ফুল শাকের মতো রান্না করে বসন্তকালে খেলে বসন্তের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। 
(১৫) প্লীহা ও যকৃতের কার্যকারিতা কমে গেলে এবং কৃমিনাশক হিসেবে সজিনা ব্যবহার করা যায়। 
(১৬) সজিনা মূল ও বীজ সাপে কামড়ানোর চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। 
(১৭) তাছাড়া মূলের ছালের প্রলেপে দাদ উপশম হয়। 
(১৮) এর মধ্যে আছে ভিটামিন এবিসি নিকোটিনিক এসিড, প্রোটিন ও চর্বি জাতীয় পদার্থ, কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদি। বাংলাদেশ ও ভারতের অধিবাসীরা এটির স্যুপ হিসেবে, বিশেষ করে, ডালের সঙ্গে রান্না করে খেয়ে থাকে। 
(১৯) এ সময় (গ্রীষ্ম কালে) ঋতু পরিবর্তনের কারণে আমাদের অনেকেরই মুখে স্বাদ থাকে না। আর এ স্বাদকে ফিরিয়ে আনতে সাজনার জুড়ি নেই। 
(২০) এই গাছের শেকড়ের রস কানে দিলে কানের ব্যথা ভাল হয়ে যায়। 
(২১) সজিনার আঠা দুধের সাথে খেলে মাথা ব্যথা সেরে যায়। আবার এর আঠা কপালে মালিশ করলেও মাথা ব্যথা সেরে যায়। এছাড়া ফোঁড়া হলে সাজিনার আঠার প্রলেপ দিলে সেরে যায়। 
(২২) সজিনা ফুলের রস দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে মূত্রপাথরী থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এর ফুলের রস হাঁপানী রোগে বিশেষ উপকারি। 
(২৩) সজিনা পাতার রসের সাথে লবণ মিশিয়ে থেতে দিলে বাচ্চাদের পেটে জমা গ্যাস দূর হয়। 
(২৪) সজিনা পাতা সেবনে স্তন্যদাত্রী মায়েদের বুকের দুধ নিঃসরণ বেশী হয়। এক টেবিল চামচ সজিনা পাতার গুঁড়ো থেকে ১ হতে ২ বছর বয়সী শিশুদের অত্যাশ্যকীয় ১৪% প্রোটিন, ৪০% ক্যালসিয়াম ও ২৩% লৌহ ও ভিটামিন এ সরবরাহ হয়ে থাকে। দৈনিক ৬ চামচ সজনে পাতার গুঁড়া একটি গর্ভবতী বা স্তন্যদাত্রী মায়ের চাহিদার সবটুকু ক্যালসিয়াম ও আয়রন সরবরাহ করতে সক্ষম। 

রেফারেন্সঃ 
১) https://en.wikipedia.org/wiki/Moringa_oleifera 
২) http://examine.com/supplements/moringa-oleifera/ 
৩)http://www.webmd.com/vitamins-supplements/ingredientmono-1242-moringa.aspx?activeingredientid=1242&activeingredientname=moringa 
৪) http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/17089328 

:) :) @}-;-;-;-'-'-'---

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Dombeya

পলক জুঁই

চামেলি