কাটাময়ী মাধুর্য......ক্যাকটাস!

ক্যাকটাস সত্যি অন্য রকম। আর সব গাছের মতো, ফুলের মতো নয়। সাদা চোখে প্রাণহীন দেখায় বটে। বাস্তবে এর ভরপুর প্রাণ। বহু বছর বাঁচে। সৌন্দর্য বিলি করে। এভাবে বছরের পর বছর বাসার বারান্দা বা ছাদের টবে টিকে থাকে। ড্রইংরুমেও নির্ঝঞ্ঝাট ক্যাকটাস। সব মিলিয়ে সৌন্দর্যপ্রেমীদের ভীষণ প্রিয়। 

ক্যাকটাসের অসংখ্য জাত। শুধু ঢাকার বোটানিক্যাল গার্ডেনে রয়েছে দুই শতাধিক প্রজাতির ক্যাকটাস। বলধা গার্ডেনে আছে দেড় শতাধিক। দু’জায়গাতেই বিশেষ পরিচর্যার ব্যবস্থা আছে। তাই খুব সহজে চোখে পড়ে এর সৌন্দর্যটা। অবশ্য ক্যাকটাসের বেলায় খুব যে যত্নের দরকার হয়, তাও নয়। বিশেষ যত্নআত্তি ছাড়াই দিব্যি বেঁচে থাকে। আলো-বাতাস-পানির তেমন দরকার হয় না। বৃদ্ধির জন্য জায়গায়ও লাগে কম। 

কাঁটা এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। নিন্দুকেরা বলেন, ক্যাকটাস খুব স্বার্থপর! সহজে কারও উপকারে আসে না। গায়ে কোন পোকার মাকড় বসবে? খাদ্য খুঁজবে? না, সে সুযোগ দেয় না ক্যাকটাস। এর গায়ের ঘন কাঁটা তাদের রুখে দেয়। ক্যাকটাস শেকড় দিয়ে আশপাশের সব গাছের পানি নাকি একলা শুষে নেয়, আছে এমন অভিযোগও! এর ফলে ক্যাকটাসের পাশে অন্য কোন গাছ নাকি স্বাচ্ছন্দ্যে বেড়ে উঠতে পারে না। তবে ক্যাকটাসের সৌন্দর্য এসব সমালোচনাকে পেছনে ফেলে দেয়। বিশেষ করে যখন ফুল ফোটে তখন অন্য রকম মুগ্ধতা নিয়ে তাকাতে হয় ক্যাকটাসের দিকে। তবে খুব স্থায়ী হয় না ক্যাকটাসের ফুল। অধিকাংশই দু’এক দিনের মধ্যে ঝরে পড়ে। তবে বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, কোন কোন গাছ বেঁচে থাকে তিন শ’ বছর পর্যন্ত! মূলত রাতে ফুল ফোটে। ফুলের রং সাধারণত সাদা। বাহারি ফুল ফোটে দিনের বেলায়। হলুদ, লাল, গোলাপি, বেগুনি আরো কত কত রং! 

উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মা জানান, সাধারণত শেকড় থেকে ক্যাকটাসের চারা তৈরি করা হয়। তবে একে শিল্পিত করার একটি ব্যাপার আছে। গ্রাফটিং বা জোড়কলম পদ্ধতি ব্যবহার করে এটি করা যায়। দুই বা ততোধিক প্রজাতির ক্যাকটাস একত্রে জুড়ে দেয়ার এ পদ্ধতি এখন বেশ জনপ্রিয়। কেটে ছেঁটে, ঘুরিয়ে, বাঁকিয়ে নানা বর্ণের মিশ্রণে ক্যাকটাস গাছকে নিজের প্রিয় শিল্পকর্মের রূপ দেন শৌখিন মানুষ। 

বাংলাদেশের গাছ ও ফুল নিয়ে গবেষণা করেছেন মৃত্যুঞ্জয় রায়। তিনি জানান, তিন ভাগের একভাগ মাটি, একভাগ বালি এবং একভাগ পাতা পচা সার ভালভাবে মিশিয়ে টব তৈরি করতে হয়। এরপর ক্যাকটাসের গোড়ায় সপ্তাহে একবার পানি ছিটিয়ে দিলেই চলে। তবে ক্যাকটাসকে ফুলবাগানে স্থাপন করা কঠিন জানিয়ে তিনি বলেন, বাগানে পানি জমার আশঙ্কা থাকে। আর ক্যাকটাসের গোড়ায় পানি জমা মানেই বিপদ। বর্ষাকালে মাটির আর্দ্রতা বেড়ে গেলে গাছের গোড়া পচে যায়। অবশ্য উঁচু জায়গায় ক্যাকটাস রোপণ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে বৃষ্টির পানি যাতে গাছে সরাসরি না পড়তে পারে সে দিকে নজর রাখতে হয়। গাছের ওপরে পলিথিন কিংবা কাচ দিয়ে আচ্ছাদন তৈরি করে বাঁচানো যায় ক্যাকটাস। গাছ রক্ষার এ আয়োজনকে বলা হয় গ্রীন হাউস। এর পরও পোকামাকড় ও রোগজীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে ক্যাকটাসের। এ জন্য একালাক্স দ্রবণ মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হয়। মাঝেমধ্যে ছত্রাকনাশক ওষুধ প্রয়োগেরও পরামর্শ দিয়েছেন অভিজ্ঞ চাষীরা। 

এছাড়া, বেলে-দোঅাঁশ ও দোঅাঁশ মাটি ক্যাকটাসের জন্য উপযোগী। বেলে-দোঅাঁশ মাটি এক ভাগ, পচা কম্পোস্ট সার তিন ভাগ, শুকনো গোবরের গুঁড়া এক ভাগ, চুনসুরকি এক ভাগ ও মোটা বালু ছয় ভাগ একত্রে মিশিয়ে ১৫ দিন রেখে ক্যাকটাসের মাটি তৈরি করতে হয়। সার-মাটি টবে বা পাত্রে বা পলিব্যাগে ভরতে হবে। তবে ফুলের জন্য সামান্য কিছু হাড়ের গুঁড়া মাটির সঙ্গে মেশাতে পারেন। প্রতিটি মাটি ভর্তি টবে/পলিব্যাগ/পাত্রে ক্যাকটাসের অঙ্গ বা কুঁড়িসহ একটু কান্ড রোপণ করে দিতে হবে। ১৫-২০ দিন পরই নতুন কুঁড়ি গজাতে শুরু করে। ক্যাকটাস খুব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। বেডে রোপণ করা অঙ্গ থেকে উৎপাদিত চারাও টবে লাগাতে পারেন। চারা উৎপাদনের জন্য তিন মিটার লম্বা এবং এক মিটার প্রস্থ আয়তনের বেডে পাঁচ ইঞ্চি দূরে দূরে ক্যাকটাসের অঙ্গ রোপণ করতে হয়। বেডের চারদিকে ১০ ইঞ্চি নালা রাখতে হয়। অতিবৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য পলিথিনের ছাউনি দিতে হবে। ক্যাকটাস চাষ বা চারা উৎপাদন বছরের যে কোনো সময় করা যায়। তবে মার্চ-অক্টোবর সবচেয়ে উপযোগী। চারার বয়স দুই মাস হলে বেড থেকে চারা তুলে টবে বা পাত্রে লাগাতে হবে। ক্যাকটাসের তেমন পরিচর্যার প্রয়োজন না হলেও টবে রোপণকৃত ক্যাকটাসে প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুবার পানি দিতে হয়। দুই-তিন সপ্তাহ পরপর একটু রোদে দিলে ক্যাকটাস দ্রুত বৃদ্ধি পায় ও সবুজ হয়। নার্সারী থেকে ক্যাকটাসের সার এনে গাছে দিলে বৃদ্ধি স্বাভাবিক থাকে। নষ্ট, রোগাক্রান্ত ও অাঁকাবাঁকা শাখা-প্রশাখা বছরে একবার ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে কেটে দিতে হবে। পাঁচ-সাত বছর পরপর টবের আকার-আকৃতি বড় করতে হবে। বনসাইয়ের মতো ক্যাকটাস নিয়ন্ত্রণ করে বা প্রুনিং করে বছরের পর বছর ঘরের ভেতর রাখা যায়।

তথ্যসূত্র- দৈনিক জনকন্ঠ, দৈনিক যায় যায় দিন 
ছবি- নেট 


:) :) @}-;-'-;-'-;------

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Dombeya

পলক জুঁই

চামেলি