টপিয়ারী

টপিয়ারী শব্দটি হয়তো অনেকের কাছে নতুন কিন্তু আমরা সবাই কম-বেশি টপিয়ারী দেখেছি। টপিয়ারী হচ্ছে বহু-বর্ষজীবী গাছকে কেঁটে-ছেঁটে বিভিন্ন আকৃতি দেয়ার একটি পদ্ধতির নাম। এই পদ্ধতিতে বহু-বর্ষজীবী উপ-গুল্ম, গুল্ম অথবা বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ ব্যবহৃত হয়। সড়ক-দ্বীপ বা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, অফিসে বর্ডার করার জন্য গাছকে যেভাবে ছেঁটে রাখা হয় সেটা টপিয়ারীর সবচেয়ে সহজ উদাহরণ। 

এছাড়া ছবি দেখেই বুঝবেন টপিয়ারী আপনার কত চেনা! টপিয়ারী মূলতঃ দুইটি বিষয়কে মাথায় রেখে করা হয়। এক- জ্যামিতিক অর্থাৎ গোল, চারকোণা ইত্যাদি আকৃতি দেয়া হয় আর দুই- fanciful অর্থাৎ নিজের ইচ্ছেমতো কোনো জীবজন্তু, কাল্পনিক চরিত্র ইত্যাদি। বাগানের hedge বা গাছ দিয়ে করা বেড়া ও একধরণের টপিয়ারী। আমাদের দেশে এই ধরণের টপিয়ারীই বেশি দেখা যায়। এছাড়া, গাছ ছাঁটাই করে গোল করে রাখতেও দেখা যায়। গাছ দিয়ে করা পশু-পাখীর fanciful টপিয়ারী সাধারণত বৃক্ষমেলায় দেখা যায়। টপিয়ারী একধরণের আর্ট। শ্রম-সাধনা-অধ্যবসায় ছাড়া ভালো টপিয়ারী করা সম্ভব না। টপিয়ারীর জন্য গাছ নির্বাচনে খেয়াল রাখতে হবে গাছটি যেন বহুবর্ষজীবী, ছোট পাতা, চিরসবুজ ও ঘনপাতার হয়। 

টপিয়ারীর জন্য দেশের বাহিরে European box (Buxus sempervirens), arborvitae (Thuja species), bay laurel (Laurus nobilis), holly (Ilexspecies), myrtle (Eugenia, Myrtus species), yew (Taxus species), privet (Ligustrum species) গাছগুলো বেশ জনপ্রিয়। আমাদের দেশে কাঁটামেহেদী, থুজা, ঝাউ, বকুল, কামিনী, বাগানবিলাস, ফুরুস, Clerodendrum inerme, Myrtus communis প্রভৃতি দিয়ে সহজ বেড়াসদৃশ বা গোল করে টপিয়ারী করা হয়। 

প্রাচীনকাল থেকেই চীন, জাপান, ইংল্যান্ডসহ ইউরোপের দেশগুলোতে টপিয়ারী তৈরির চর্চা শুরু হয়েছিল। ১৯৬২ সালে ডিজনীল্যান্ডে ডিজনির সব চরিত্রদের নিয়ে টপিয়ারী করার কাজ শুরু হয়। যা বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। এছাড়া বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার Railton Town of Topiary, চীনের সাংহাইয়ের Mosaiculture, ভারতের মণিপুরের Samban-Lei Sekpil, থাইল্যান্ডের রয়েল প্যালেস(ব্যাঙপা-ইন), ভারতের চাঁদনিগড়ের Terrace Garden, দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরের Tulcan Topiary Garden Cemetery সহ ইউরোপ জুড়ে আরো অনেক অনেক প্রাচীন ও সুন্দর টপিয়ারী বাগান রয়েছে। ভারতের মণিপুর রাজ্যের Samban-Lei Sekpil টপিয়ারী বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু টপিয়ারী, যা কাঁটামেহেদী গাছ দিয়ে করা হয়েছে। সবচেয়ে প্রাচীন টপিয়ারী বাগান হিসেবে গিনিজ বুক অব রেকর্ড আছে ইংল্যান্ডের লিভেন হল এর। ইংরেজি সাহিত্যে টপিয়ারী বাগান নিয়ে অনেক গল্প, উপন্যাস, ভৌতিক বা রহস্য গল্প আছে। 

ছবি- নেট

 :) :) @}-;-'-;-'-;--------

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Dombeya

পলক জুঁই

চামেলি