পরিচিত কিছু স্যাকুল্যান্ট
উদ্ভিদবিদ্যার ভাষায়, succulent plant হলো স্বাভাবিক পাতার চেয়ে মোটা ও মাংসল পাতা বিশিষ্ট গাছ। এই succulent plant বিভিন্ন ধরণ ও গড়ণের হয়ে থাকে এবং এরা পাতা বা কান্ডে পানি ধরে রাখে। এদেরকে কখনো সাকুলেন্ট আবার কখনো ফ্যাট প্ল্যান্ট বলা হয়।
বেশিরভাগ সাকুলেন্ট এর আদি নিবাস শুষ্ক অঞ্চল যেমন- তৃণলতা বিশিষ্ট সমতল ভূমি, আধা-মরুভূমি বা মরুভূমি। এছাড়া কিছু প্রজাতি আছে এপিফাইট জাতীয়, এরা মাটি-পানি ছাড়াই বাঁচে। পৃথিবীতে কত ধরণের সাকুলেন্ট আছে তার সঠিক সংখ্যা খুঁজে পাইনি। আমাদের পরিচিত সাকুলেন্ট ছাড়াও এখন বিভিন্ন ধরণের সাকুলেন্ট গাছ পাওয়া যাচ্ছে নার্সারীগুলোতে। এদের যত্ন নেয়া খুব সহজ আর ঘর সাজাতেও এদের জুড়ি নেই। পরিচিত কিছু সাকুলেন্ট থাকছে আজকের অ্যালবামে।
১. পাথরকুচি, পাত্থরফুড়ি, পাষাণভেদ
সবচেয়ে পরিচিত পাথরকুচি গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম- Bryophyllum pinnatum(Syn. Kalanchoe pinnata, Cotyledon pinnata) এই পাথরকুচির আরেক নাম- কপ পাতা, পাটিয়াপুরি, হিন্দিতে জখমী হায়াত আর সংস্কৃতে পাষাণভেদ। ইংরেজিতে Cathedral Bells, Air Plant, Life Plant, Miracle Leaf, Goethe Plant, Katakataka, Leaf of Life, Wonder of the World প্রভৃতি।
পাথরকুচি গাছ সাধারণত দেড়-দুই ফুট উঁচু হয়। কোনো গাছ ৫-৬ ফুট উঁচুও হয়ে থাকে। পাতা মাংসল ও মসৃণ, ডিম্বাকার, কিনার খাঁজকাটা। পাতা মাটিতে ফেলে রাখলে নতুন চারা গাছ জন্মে। শীতের শেষে ফুল হয়। লম্বা ডালের আগায় গুচ্ছাকারে ফুল ফোঁটে, ফুলের ঝাড় লন্ঠনের মতো, নিচের দিকে ফুলগুলো মুখ করে থাকে। ফুলের রঙ লাল, ভিতরটা ফাঁপা, লম্বায় এক/দেড় ইঞ্চি। পাথরকুচি দারুন ভেষজ গুণসম্পন্ন। পুরনো সর্দিতে পাথরকুচির পাতার রস গরম করে খেলে উপকার আছে। গাছপালা তরুলতা বইয়ে লেখক পাথরকুচির নানান ব্যবহারের কথা লিখেছেন।
পাথরকুচির আরেকটি প্রজাতি খুব দেখা যায়, যার বৈজ্ঞানিক নাম- Bryophyllum daigremontianum। ইংরেজিতে একে Mother of Thousands, Alligator Plant, Mexican Hat Plant নামে ডাকা হয়। এর আদি নিবাস মাদাগাস্কার। এই গাছটিতেও শীতের শেষে খুব সুন্দর ফুল ফোটে। এই গাছে রয়েছে daigremontianin ও bufadienolides নামক রাসায়নিক উপাদান, যা শিশুদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। লাল, হলুদ, সাদা, গোলাপি রঙের; সিঙ্গল বা
ডাবল জাতের আরেকটি পাথরকুচি এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যার বৈজ্ঞানিক নাম- Kalanchoe blossfeldiana, ইংরেজি নাম- Flaming Katy, Christmas Kalanchoe, Florist Kalanchoe, Madagascar widow's-thrill। এর আদিনিবাসও মাদাগাস্কার। সুন্দর ফুলের জন্য লাগানো হয়।
Bryophyllum manginii ইংরেজি নাম- beach bells, প্রচলিত কোনো বাংলা নাম নেই। আমাদের পাথরকুচির আত্মীয়, আদিনিবাস মাদাগাস্কার। ছোট পটে ঘরে রাখার মতো একটি গাছ। আমাদের দেশে সহজলভ্য নয় :(
২. অ্যালো(Aloe)
আমাদের খুব পরিচিত অ্যালোভেরাও একধরণের সাকুলেন্ট। প্রায় ৫০০টি প্রজাতি নিয়ে অ্যালো গণটি গঠিত। ছোট্ট একটা পটে সাজিয়ে রাখতে পারেন অ্যালোভেরা। এরা আপনার ঘরের বাতাস থেকে বেনজিন ও ফরমাল্ডিহাইড শোষণ করে বাতাস বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করবে। অ্যালোভেরার খুব সুন্দর বাংলা নাম আছে, ঘৃতকুমারী ও ঘৃতকাঞ্চন। বৈজ্ঞানিক নাম- Aloe vera (L.) Burm.f., পরিবার- Asphodelaceae।
৩. ক্যাকটাস
বিভিন্ন ধরণের ক্যাকটাস গাছগুলোও সাকুলেন্ট জাতীয় গাছ। ক্যাকটাস সত্যি অন্য রকম। আর সব গাছের মতো ফুলের মতো নয়। সাদা চোখে প্রাণহীন দেখায় বটে। বাস্তবে এর ভরপুর প্রাণ। বহু বছর বাঁচে। সৌন্দর্য বিলি করে। এভাবে বছরের পর বছর বাসার বারান্দা বা ছাদের টবে টিকে থাকে। ড্রইংরুমেও নির্ঝঞ্ঝাট ক্যাকটাস। সব মিলিয়ে সৌন্দর্যপ্রেমীদের ভীষণ প্রিয়। ফুল ফোটে বহু ক্যাকটাসে।
৪. গাছের নাম- Burro's tail, donkey tail
বৈজ্ঞানিক নাম- Sedum morganianum
দক্ষিণ মেক্সিকো ও হন্ডুরাসের প্রজাতি। পটে লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখার মতো গাছ লম্বায় প্রায় ২৪ ইঞ্চির মতো হতে পারে। গ্রীষ্মে গাছের আগায় ছোট ছোট গোলাপি বা লাল ফুল ফোটে।
৫. জেব্রা প্ল্যান্ট
বৈজ্ঞানিক নাম- Haworthia attenuata
এরাও সাকুলেন্ট, এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি প্রদেশ পূর্ব কেপ থেকে। বেশ কিছু ভ্যারাইটি আছে। ফুলের চেয়ে গাছের সৌন্দর্যের কারণেই এর বেশ কদর রয়েছে। আমাদের দেশেও পাওয়া যায়।
৬. এচিভেরিয়া(Echeveria)
মেক্সিকান উদ্ভিদবিদ Atanasio Echeverría y Godoy এর নামানুসারে গণের নামকরণ করা হয়েছে। এই গণে আছে নানান প্রজাতি আর হাইব্রিড জাতের উদ্ভিদ। গাছের পাতা থেকে নতুন চারা তৈরি করা যায়। বিদেশি এচিভেরিয়া এখন আমাদের দেশের নার্সারীগুলোতেও পাওয়া যাচ্ছে।
৭. এয়ার প্ল্যান্ট(Air plant)
প্রায় ৭৩০টি প্রজাতি নিয়ে Tillandsia গণ, যাদের সাধারণ নাম এয়ার প্ল্যান্ট। অবশ্য প্রজাতিভেদে ভিন্ন ভিন্ন নামও রয়েছে। এরা Bromeliaceae পরিবারের সদস্য। আদিনিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চল এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বন, পাহাড় আর মরুভূমি। এরা এপিফাইটিক অর্থাৎ মাটি ছাড়াই এরা বাঁচতে পারে আর বাতাস থেকে সংগ্রহ করে বেঁচে থাকার রসদ। সুইডিশ চিকিৎসক ও উদ্ভিদবিদ Dr. Elias Tillandz এর নামানুসারে ক্যারোলাস লিনিয়াস এই গণের নামকরণ করেন। সুন্দর ফুলের জন্য আমাদের দেশেও এয়ার প্ল্যান্টের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
৮. Jade tree & Dwarf Jade plant Jade tree(Crassula ovate) দক্ষিণ আফ্রিকার প্রজাতি। হালকা গোলাপি বা সাদা ছোট ফুল ফোটে। গাছ সাধারণত অল্প যত্নেই ঘরের পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়। এরাও সাকুলেন্ট। অন্যান্য নামের মধ্যে jade plant, friendship tree, lucky plant, money tree নামগুলো উল্লেখযোগ্য।
আর Dwarf Jade plant(Portulacaria afra) এরাও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রজাতি। পাতা দেখতে অনেকটা Jade tree এর মতো হলেও এরা ভিন্ন দুইটি প্রজাতি। এরা সাকুলেন্ট হলেও ঘরের বনসাই হিসেবে এরা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। এর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, শীতপ্রধান দেশে এর বড় গাছগুলো প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করেও বেঁচে থাকে আবার এরা খড়া-সহনশীল এবং আগুন সহ্য করেও বেঁচে থাকতে পারে। অন্য নামের মধ্যে elephant's food, elephant bush, spekboom উল্লেখযোগ্য।
৯. স্যানসেভিরিয়া
বৈজ্ঞানিক নাম- Sansevieria trifasciata
পরিবার- Asparagaceae
অন্যান্য নাম- snake plant, mother-in-law's tongue, Saint George's sword
প্রাকৃতিকভাবে নাইজেরিয়া থেকে কঙ্গো পর্যন্ত এর বিস্তৃতি হলেও ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে এরা বেশ জনপ্রিয়। এমনকি নাসা’র গবেষণাতে এদেরকে বাতাস বিশুদ্ধকারী উপকারী গাছ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এরা বাতাসের নাইট্রোজেন অক্সাইড ও ফরমাল্ডিহাইড শোষণ করে বাতাসকে দূষণমুক্ত করতে সাহায্য করে। অনেক হাইব্রিড জাত আছে। রাইজোমের মাধ্যমে চারা করা যায়।
১০। ফুলের নাম- অ্যাগাভ, সেঞ্চুরী প্ল্যান্ট
বৈজ্ঞানিক নাম- Agave americana
পরিবার- Agavaceae
মেক্সিকোর প্রজাতি, সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য এখন প্রায় সারাবিশ্বেই এই গাছ লাগানো হয়। গাছগুলো অনেকটা ঘৃতকুমারীর মতো, প্রায় ৪মিটার জায়গা জুড়ে বেড়ে উঠে। পাতা মাংসল/মোটা, প্রায় ৬ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। সাধারণত পাতার রঙ ধুসর-সবুজ, পাতার কিনার হলুদ - জাতের অ্যাগাভ গাছও অনেক বাগানে দেখা যায়। পাতার কিনার দাঁত/ spine যুক্ত। গাছগুলো অনেক বছর বাঁচে, প্রায় ২৫ বছরের মতো বেঁচে থাকে। অনেকের মতে ফুল হওয়ার পর অ্যাগাভ গাছ মারা যায়। অ্যাগাভের ফুল কিন্তু কম আকর্ষণীয় নয়! গাছের গোড়া থেকে বেশ লম্বা পুষ্পমঞ্জরী বের হয়। তারই শাখা-প্রশাখায় ফোঁটে হলুদ রঙের ফুল। ফুল ফোঁটার আগেই যদি পুষ্পমঞ্জরীর ডাল কেঁটে দেয়া হয় তাহলে সেখানে মিষ্টি স্বাদের তরল পাওয়া যায়, যার নাম aguamiel। এই তরলকে প্রক্রিয়াজাত করে নানান ধরণের পানীয় তৈরির প্রচলন রয়েছে মেক্সিকোতে। অ্যাগাভ গাছের গোড়ায় বা তার আশেপাশে নতুন চারা জন্মে, যার মাধ্যমে এরা বংশবিস্তার করে থাকে। নার্সারিতে প্রায়ই অ্যাগাভের চারা পাওয়া যায়। এছাড়া, বিভিন্ন পার্ক বা উদ্যানে অ্যাগাভ দেখতে পাবেন।
:) :) @}-;-'-;-'-;--------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন