বকুল

"কখন দখিন হতে
 কে দিল দুয়ার ঠেলি,
 চমকি উঠিল জাগি 
চামেলি নয়ন মেলি। 
বকুল পেয়েছে ছাড়া,
 করবী দিয়েছে সাড়া, 
শিরীষ শিহরি উঠে 
দূর হতে কারে দেখি।" 


ফুলের নাম- বকুল 
বৈজ্ঞানিক নাম- Mimusops elengi 
পরিবার- Sapotaceae 

বকুল, পারুল, শাল এবং পিয়াল বসন্ত ও গ্রীষ্মের ফুল। বসন্তে এদের ফোঁটার পালা আর গরমকালেও তারা ফুটতে থাকে। বাংলার বেশিরভাগ পুষ্প-বৃক্ষে বসন্ত ও গ্রীষ্মে ফুল ফোটে। এসময় তাদের থাকে নবীন কিশলয়।

 বকুল চিরহরিৎ তরু অর্থাৎ এই গাছ কখনো পাতাশূন্য হয় না। এরকম গাছ আমাদের খুব কম আছে। এই গাছ ৪০-১০০ ফুট পর্যন্ত বড় হয়। আফ্রিকান বকুল আছে বলধা বাগানে। বকুল একসময় মহীরুহে পরিণত হয়। বলধা গার্ডেন, আর্ট ইনস্টিটিউট এ এরকম বড় বকুল বৃক্ষ আছে। এছাড়া রমনা পার্কে, সোহরাওয়ার্দি উদ্যান, রামকৃষ্ণ মিশন ও নানা জায়গায় বকুল গাছ আছে। ছায়াতরু হিসেবে এর তুলনা হয় না। বকুলকে ক্ষীরীবৃক্ষও বলে। গাছের পাতা ভাঙলে আঠা বের হয় বলে এই নাম। হিন্দিতে একে বলে মৌলসারী, উরিষ্যায় বলে বৌলী। আর আমাদের চট্টগ্রামে বলে বৈল।

 বসন্তের শেষ থেকে শরৎকাল পর্যন্ত বকুল প্রায় রোজই ফোটে। কোনো কোনো গাছে বারো মাস ফুল থাকে। এজন্য আরো দুটি নাম আছে- সদাপুষ্প ও স্থিরকুসুম। ইংরেজিতে Spanish cherry, medlar, bullet wood নামে ডাকা হয়।বকুল ফুল শুকিয়ে রাখা যায়, পঁচে না। 

বকুলের আদি নিবাস জাভা-সুমাত্রা দ্বীপ ও উপদ্বীপাঞ্চল, আন্দামান, মায়ানমার, বাংলাদেশ এবং ভারত। এই অঞ্চলে এই গণের ৩০টি প্রজাতি আছে। তারমধ্যে বাংলাদেশ ও ভারত উপমহাদেশে ৪টি প্রজাতি আছে। বকুল গাছকে মায়ানমারের লোকেরা পবিত্রবৃক্ষ মনে করে। 

বকুলের কান্ড সরল, নাতিদীর্ঘ, বহুশাখী। গাছের শীর্ষ গোলাকার। পাতা গাঢ় সবুজ, ঘন বিন্যস্ত। বাকল ধূসর, রুক্ষ ও অমসৃণ। বকুল গাছকে ছেটে সুন্দর করে রাখা যায়। বকুল ফুল খুব ছোট, রঙ পাংশু-সাদা। পাপড়ির পরাগচক্রের বৈশিষ্ট্যের জন্য তারার মতো দেখায়। আর সুগন্ধ বাতাসে ভর করে দূরবাহী হয়। শুকনো ফুল ম্লান আর বিবর্ণ হলেও ঘ্রাণের জন্য আদরকাড়া। ঝরা ফুল গাছতলায় বিছিয়ে থাকে। ফুল মধুপ্রদায়ী বলে মৌমাছি ও ভ্রমর আসে, গুঞ্জন তোলে। 

ফল ডিমের মতো, কাঁচা থাকতে সবুজ পাকলে হলুদ। পাকা ফল খাওয়া যায়। বকুল গাছের মূল ও গাছের ছাল, পাতা, ফুল, ফল ও বীজ ঔষধি গুণসম্পন্ন। শ্বেতী, দাঁতের ক্ষয়রোগ, দাঁত নড়া, মাথার যন্ত্রণা, কোষ্ঠবদ্ধতা ও আমাশয়ে বকুল উপকারী। আর গান, কবিতা, গল্প-উপন্যাসে বকুলের বিস্তৃতি নতুন করে লেখার কিছু নেই, সেটা সবারই জানা। 

বলধা গার্ডেনে বিচিত্র বকুল নামে একটি গাছ আছে। বৈজ্ঞানিক নাম- Mimusop elengi L. veriegata. এর পাতা সত্যিই বিচিত্র। পাতার চারিদিকে হলদে রঙ আবার তাতে ছোপ-ছোপ হলদে সোনালি আভা। এরকম আরেকটি গাছ আছে জাতীয় স্মৃতিসৌধে। 

মূল লেখা- বিপ্রদাশ বড়ুয়া 
ছবি- নেট


 :) :) @}-;-'-;-'-;----------

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Dombeya

পলক জুঁই

চামেলি