অর্কিড

যেসকল উদ্ভিদে ফুল ফোটে তাদের দুটি বড় পরিবার হচ্ছে- Asteraceae এবং Orchidaceae . Orchidaceae পরিবারে প্রায় ১০০০ গণ এবং ২৫০০০ প্রজাতি মতান্তরে, প্রায় ৪৮০০০ প্রজাতি ও হাইব্রিডসহ মোট অর্কিডের সংখ্যা ৭০০০০। আনুমানিক ২০০ বছর আগে থেকে অর্কিডের চাষ শুরু হয়েছে এবং ইউরোপিয়ানরাই প্রথম জঙ্গলের অর্কিডকে বাগানে যত্নের সাথে চাষ করে আলোড়ন তৈরি করেছেন। 

ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের সময় ব্রিটিশ পর্যটক ও উদ্ভিদবিদগণ গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের বিভিন্ন বন-জঙ্গলে ঘুরে বেরাতেন। এসময় উচু গাছের ডালে, পাহারের কোলে জন্মানো অর্কিডের মনমাতানো সৌরভ ও সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে গাছ সংগ্রহ করে ইংল্যান্ডে নিয়ে যেতেন। সেখানে এই ফুল ধনী ও সৌখিন পুষ্পপ্রেমীদের আকর্ষণ করতো ফলে অর্কিডের চাহিদা দিন দিন বাড়তে থাকে। 

অর্কিড শিকারীরা বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, কানাডা, আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন জাতের অর্কিড সংগ্রহ করতে লাগলেন যা ইউরোপের বাজারে বেশ চড়া দামে বিক্রি হতে লাগলো আর লন্ডনে এর চাষ হতো। পরবর্তীতে অর্কিড নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। সারাবিশ্ব জুড়ে রয়েছে অর্কিডের কদর। অর্কিডের বিচিত্র এই রূপের কাছে নাকি রংধনু ও হার মানে। সত্যিই স্রষ্টা কত নিখুতভাবে সৃষ্টি করেছেন এই ফুলগুলোকে! একটি ফুলের রং-রূপ এর সাথে কোনো মিল নেই অন্যটির। অর্কিডের 

সবচেয়ে মজার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- ভালোভাবে প্যাকিং করা হলে বা সংরক্ষণ করা হলে এই ফুল অনেকদিন পর্যন্ত তাজা থাকে, এমনকি আপনি যদি ইচ্ছে করেন এই ফুল নিয়ে আপনি প্লেনে করে পৃথিবীর এই প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্ত ঘুরে আসতে পারবেন ;) 

প্রাকৃতিকভাবে অর্কিড সারাবিশ্বেই ছড়িয়ে আছে, তবে একেক অঞ্চলে একেক জাতের অর্কিড পাওয়া যায়। বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলসহ সারাদেশের বন-বাদাড়ে এমনকি বাড়ির উঠোনের আম, জাম, তেতুল গাছেও অর্কিড গাছ জন্মাতে দেখা যায়। 

আমাদের দেশে দু ধরণের অর্কিড বেশি দেখা যায়। এগুলো হলো এপিফাইটিক ও টেরেস্ট্রিয়াল। এপিফাইটিক হলো পরজীবী উদ্ভিদ অর্থাৎ এরা অন্য কোনো বড় গাছের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে। আর টেরেস্ট্রিয়াল অর্কিড মাটিতেই জন্মায়। বিশ্বে সর্বাধিক জনপ্রিয় এমন কয়েকটি অর্কিড সম্পর্কে কিছু তথ্য দেয়ার চেষ্টা করছি। 


১. Phalaenopsis অর্কিড 

Phalaenopsis গণের প্রজাতিগুলো অধিক পরিচিত এবং সহজেই এদের দেখা মিলে। ব্যবসায়িকভাবে যেসকল অর্কিডের চাষ করা হয় তার মধ্যে Phalaenopsis গণের প্রজাতিগুলোর চাহিদা, উৎপাদন ও বাজারজাত সবচেয়ে বেশি। এই অর্কিডগুলোকে Moth Orchid বলা হয়। Phalaenopsis গণের অধীনে ৬০ টি প্রজাতি এবং অসংখ্য হাইব্রিড প্রজাতি রয়েছে। 

২. Cattleya অর্কিড 

Cattleya অর্কিডকে “অর্কিডের রাণী” বলা হয়। নানান রঙ ও গঠণ বৈচিত্র্যের কারণে Cattleya ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। Cattleya একটি গণের নাম, যার অধীনে প্রায় ১১৩ টি প্রজাতি রয়েছে। ১৮২৪ সালে স্যার উইলিয়াম কেটলে এর নামানুসারে উদ্ভিদবিজ্ঞানী জন লিন্ডলে গণের নামকরণ Cattleya করেন। Cattleya অর্কিড এপিফাইটিক উদ্ভিদ। সিউডোবাল্ব থেকে একেকটি ডাল বের হয়ে সেখানে ফুল হয়। একেকটি ডালে কখনো একটি, কখনো একের অধিক ফুল হতে দেখা যায়। Cattleya অর্কিডের ফুলগুলোতে ছয়টি পাপড়ি থাকে- তিনটি সরু পাপ, দুইটি প্রশস্ত পাপড়ি আর একটি দৃষ্টিআকর্ষণকারী বিশেষ গড়নের পাপড়ি। Cattleya অর্কিড পর্যাপ্ত সূর্যালোক, রাতে ৫৫-৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইট ও দিনে ৭০-৮৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা, ৫০-৮০% আর্দ্রতা, নিয়মিত নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ ও নিয়মিত পানি দেয়ার মাধ্যমে বাসায় লালন-পালন করা সম্ভব 

৩. Dendrobium অর্কিড 
১৭৯৯ সালে উলফ ওয়ার্টজ Dendrobium গণ প্রতিষ্ঠা ও নামকরণ করেন। এই গণে বর্তমানে মোট প্রজাতির সংখ্যা ১২০০। এছাড়াও অসংখ্য হাইব্রিড প্রজাতিতো আছেই। Dendrobium গ্রীক শব্দ, যার Dendron অর্থ গাছ আর bios অর্থ জীবন অর্থাৎ যেসকল উদ্ভিদ অন্য গাছে জন্মে থাকে। নাম থেকেই বোঝা যায় যে, Dendrobium এপিফাইটিক বা পরজীবী উদ্ভিদ এছাড়া কিছু প্রজাতি লিথোফাইটিক বা মিথোজীবী। হিমালয় পর্বতাঞ্চলের উচু পর্বত থেকে শুরু করে নিচু অঞ্চলের বন-জঙ্গল, অস্ট্রেলিয়ার শুষ্ক মরু-প্রান্তর সর্বত্রই Dendrobium বিস্তৃত। 

Dendrobium গণের অর্কিডগুলো সিম্পোডিয়াল গড়নের যা সিউডোবাল্ব গঠন করে। বিভিন্ন প্রজাতিতে কান্ডের দৈর্ঘ্য বিভিন্ন হয়ে থাকে। কিছু প্রজাতির উদ্ভিদে, পাতার নিম্নাংশ কান্ডকে আবৃত করে রাখে এবং কোনো কোনো প্রজাতিতে এই অংশে কালো অথবা সাদা রোম দেখা যায়। আর কিছু প্রজাতির উদ্ভিদে, অপেক্ষাকৃত ছোট পাতা উদ্ভিদের শীর্ষভাগে গুচ্ছাকারে বিন্যস্ত থাকে। পুষ্পদন্ড ১ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে এবং পুষ্পদণ্ডে ফুলের সংখ্যা ১-৪ টি, এমনকি ১০০ টিও হতে দেখা যায়। পর্ণমোচী প্রজাতিগুলোতে প্রথম ১ অথবা ২ বছর পাতা হতে দেখা যায় এবং পরবর্তী বছরগুলোতে পাতা ছাড়াই ফুল শোভা পায়। এই জাতীয় অর্কিড গ্রীষ্মকালে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে শীতকালে বৃদ্ধি পাওয়ার এই ধারা সংক্ষিপ্ত বিরতি গ্রহন করে। কিছু প্রজাতি বীজের মাধ্যমে আর কিছু প্রজাতি কেইকির মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে। 

হর্টিকালচারে Dendrobium কে সংক্ষিপ্ত করে Den নামে ডাকা হয়। Noble Dendrobium (D. nobile) এর সবচেয়ে বেশি পরিমাণ হাইব্রিড জাত রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন হাইব্রিডের নামকরণ করা হয়েছে বিখ্যাত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে যেমন- Dendrobium Bae Yong Jun, Dendrobium Sccci 100th Anniversary, Dendrobium Margaret Thatcher প্রভৃতি। 

Dendrobium এর অনেক প্রজাতি বাতাসের টলুইন ও জাইলিন শোষণ করে পরিবেশে ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। এছাড়া কিছু প্রজাতি ঔষধিগুণসম্পন্ন। প্রাদেশিক ফুল হিসেবে- 
* Dendrobium formosum (Beautiful giant-flowered dendrobium) – Ranong Province (Thailand) এর প্রাদেশিক ফুল 
* Dendrobium moniliforme (Sekikoku) –Matsushima, Miyagi (Japan) এর প্রাদেশিক ফুল 
*Dendrobium nobile (Noble Dendrobium) –Sikkim (India) এর প্রাদেশিক ফুল 
*Dendrobium biggibum (Cooktown Orchid, anggrek larat) – Maluku province (Indonesia) এবং Queensland (Australia) এর প্রাদেশিক ফুল 
*Dendrobium utile (anggrek serat) – South East Sulawesi province(Indonesia) এর প্রাদেশিক ফুল 

এছাড়াও Cooktown Orchid (D. phalaenopsis)এর ছবি ১৯৬৮ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ান স্ট্যাম্প এ ব্যবহার করা হতো। 

৪. Vanda অর্কিড 

Vanda গণের অধীনে প্রায় ৫০টি প্রজাতি রয়েছে। এতো কম সংখ্যক প্রজাতি থাকার পরেও এই অর্কিড ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে তার নজরকাড়া বিভিন্ন রঙের ফুল এর কারণে। Vanda নামটি এসেছে সংস্কৃত ভাষা থেকে; ভারত, হিমালয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, চীনের দক্ষিণাংশ, অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাংশ পর্যন্ত প্রাকৃতিকভাবে বিস্তৃত। 

Vanda coerulea সর্বাধিক পরিচিত তার নীল দীর্ঘস্থায়ী ফুলের জন্য, এটি Blue Vanda নামে পরিচিত। মিজো ভাষায় ব্লু ভান্ডাকে বলা হয় অক্টোবর অর্কিড। Vanda tessellata এর বাংলা নাম রাস্না। Vanda পরজীবী, অল্প সংখ্যক প্রজাতি মিথোজীবী অথবা টেরেস্ট্রিয়াল। এদের বৃদ্ধি মনোপোডিয়াল ধরণের, প্রজাতিভেদে পাতা বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। নানান রঙ আর গড়ন এর ফুল গণটিতে এনেছে বৈচিত্র্য। 

৫. Oncidium অর্কিড 

১৮০০ সালে স্যার ওলফ ওয়ার্টজ সর্বপ্রথম এই গণের প্রতিষ্ঠা ও বর্ণনা প্রদান করেন। এই গণের অধীনে ৩৩০ টি প্রজাতি রয়েছে, যাদের প্রচলিত নাম “ড্যান্সিং লেডি”। বেশিরভাগ প্রজাতি এপিফাইট এবং এরা শুষ্ক পরিবেশ পছন্দ করে। এছাড়া কিছু প্রজাতি মিথোজীবী অথবা টেরেস্ট্রিয়াল। প্রাকৃতিকভাবে এরা দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা, মেক্সিকো, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ফ্লোরিডা প্রভৃতি অঞ্চলে বিস্তৃত হলেও বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই পাওয়া যায়। এই গণে রয়েছে নানান রঙের ফুল, মূলত হলুদ, লাল, সাদা ও গোলাপী। 

৬. Mokara অর্কিড 

এরা হাইব্রিড অর্কিড। Ascocentrum, Arachnis and Vanda অর্কিডের হাইব্রিড হচ্ছে Mokara অর্কিড। ১৯৬৯ সালে সিঙ্গাপুরে সর্বপ্রথম এই হাইব্রিড অর্কিডের জাত উদ্ভাবন করা হয়। Mokara অর্কিড জন্মানো খুব সহজ এবং সহজ কিছু পরিচর্যা করা হলে ফুল দিয়ে গাছ আপনাকে খুশি করে দিবে। এই জাতের অর্কিড কেনার সময় গাছ সুস্থ কিনা জানার জন্য এর মূল আর পাতার দিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখা উচিত। যেহেতু এরা ইনডোর প্ল্যান্ট তাই ঘরেই রাখতে পারেন আপনার শখের অর্কিডের চারাটি। সবচেয়ে ভালো হয় পূর্বদিকের জানালার পাশে রাখলে, যাতে সকালের রোদ গাছের গায়ে লাগে। বেশি গরম বা বেশি ঠান্ডা গাছের বৃদ্ধির জন্য খারাপ। সকালে পানি দিতে হবে, তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে গাছ পানিতে ডুবে না থাকে। 

৭. Cymbidium অর্কিড 

অন্য নাম Boat অর্কিড। ১৮১৫ সালে সর্বপ্রথম এই অর্কিড সম্পর্কে উদ্ভিদবিদগণ আলোচনা করেন। ল্যাটিন Cymba অর্থ boat। Cymbidium গণের অধীনে ৫২ টি প্রজাতি রয়েছে। Cymbidium অর্কিড ক্রান্তীয় এবং উপক্রান্তীয় এশিয়া (যেমন উত্তর ভারত, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, বর্নিও), অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাংশ প্রভৃতি অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে বিস্তৃত। এই জাতের অর্কিডগুলো শীতসহিষ্ণু। তাই ভিক্টোরিয়ান যুগে ইউরোপে এই অর্কিড বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলো। নানান রঙ এর ফুল এই গণে বৈচিত্র্য এনেছে। গাছগুলো সিম্পোডিয়াল, লম্বা ৬০ থেকে ৯০ সেমি পর্যন্ত হতে পারে। ফুলের ব্যাসার্ধ প্রজাতিভেদে ৫ থেকে ১০ সেমি পর্যন্ত হতে পারে। Cymbidium hookerianum প্রজাতি ভুটানে "olatshe" / "olachoto" রান্নার অন্যতম উপকরণ। 

৮. Arundina অর্কিড 

Cattleya অর্কিডের মতো দেখতে এই অর্কিডের প্রচলিত নাম Bamboo Orchid আর বাংলা নাম নলরাস্না। এই দুইটি গণের মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হচ্ছে- Cattleya এপিফাইটিক আর Arundina টেরেস্ট্রিয়াল। যারা মনে করেন অর্কিড ঝুলিয়ে রাখা ঝামেলার তারা সহজেই লাগাতে পারেন Arundina অর্কিড। বহুবর্ষজীবী এই অর্কিডের উচ্চতা ৭০ সেমি থেকে ২ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। 

৯. Miltonia অর্কিড 

১৮৩৭ সালে অর্কিডোলজিস্ট জন লিন্ডলে এই গণ প্রতিষ্ঠা করেন। এই গণের অর্কিডগুলো মূলত এপিফাইটিক। নানান রঙ আর গড়নের ফুলের পাশাপাশি এই গণে রয়েছে বেশ কিছু সুগন্ধি অর্কিড। মিল্টোনিয়া অর্কিডের অন্য নাম Pansy অর্কিড। 

১০. Lady’s slipper অর্কিড 

Cypripedioideae উপপরিবারের অর্কিডগুলোকে লেডিস স্লিপার বা স্লিপার অর্কিড বলা হয়, USA তে এই ফুল moccasin flower নামে পরিচিত। পাঁচটি গণ নিয়ে এই উপপরিবারটি গঠিত। Cypripedium গণের প্রজাতিগুলো উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রাকৃতিকভাবে বিস্তৃত। Cypripedium reginae প্রজাতিটি Minnesota –র স্টেট ফ্লাওয়ার। পিঙ্ক লেডিস স্লিপার কানাডার প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ডের প্রাদেশিক ফুল। 

১১. Spathoglotis অর্কিড

 ৪৫ টি প্রজাতির এই গণের অর্কিডগুলো টেরেস্ট্রিয়াল এবং প্রজাতিভেদে প্রাকৃতিকভাবে বিশ্বের প্রায় সর্বত্র বিস্তৃত। Spathoglotis কে গ্রাউন্ড অর্কিড নামে ডাকা হয়। এই অর্কিডগুলোর চাষ করা খুবই সহজ এবং এর সুন্দর ফুলের জন্য বাড়ির বাগানে দিন দিন এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

১২. Foxtail orchid 

বাংলায় ধ্রুপদীমালা নামে ডাকা হয়। Rhynchostylis retusa প্রজাতিটি বাংলাদেশ, বেনিন, বার্মা, কম্বোডিয়া, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, নেপাল, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনামে প্রাকৃতিকভাবে বিস্তৃত। এই ফুল ভারতের অরুনাচল ও আসামের প্রাদেশিক ফুল। এরা ঔষধিগুণসম্পন্ন। সাধারণত আঘাত, ক্ষত, মোচড় এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। সরাসরি সূর্যালোক বা অতিরিক্ত পানি এদের বেঁচে থাকার জন্য ক্ষতিকর। 

১৩. চেরাগ ফুল 
বৈজ্ঞানিক নাম- Aerides odorata 

দেশের প্রায় সব জায়গায় পাওয়া যায় এই অর্কিড। বাংলা কোনো নাম নেই। অনেকদিন আগে পুষ্পকথনের এক বন্ধু সুমিতাভ বড়ুয়া অপু চেরাগ ফুল নাম দিয়ে একটা ছবি পোস্ট করেছিল। সে সময় ফুলটার সঠিক নাম দিতে পারিনি। সেই ফুলটি ছিল Aerides odorata নামের অর্কিড। লম্বা শাখায়িত বায়ুমূল ঝুলে থাকে। মোটা তারের মতো কান্ডে লম্বা ও চ্যাপ্টা ঝুলন্ত পাতা। পাতার কক্ষ থেকে লম্বা ঝুলন্ত মঞ্জরিতে সাদা ফুল ঠাসা, ফুলে মোমের গ্রথন, সুগন্ধি। পাপড়ি বাদে ফুলের মাঝের অংশটি দেখতে অনেকটা চেরাগের মতো। গ্রীষ্ম ও বর্ষায় ফুল ফোটে। 

১৪. Grammatophyllum অর্কিড 

প্রায় ১৩টি প্রজাতি নিয়ে Grammatophyllum গণ গঠিত। এরা এপিফাইটিক ধরণের অর্কিড। মূল আবাস ভারত-চীন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, নিউগিনি, দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের বনাঞ্চল। ধারণা করা হয়, এ পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে বড় জাতের অর্কিড এই গণেরই বাসিন্দা Giant orchid(Grammatophyllum speciosum)। এই গণের Bell orchid (Grammatophyllum scriptum) প্রজাতিটিও বেশ জনপ্রিয় অর্কিড। এছাড়া, এই গণে আছে সবচেয়ে দীর্ঘকালব্যাপী ফুটে থাকা Grammatophyllum multiflorum জাতের অর্কিড। এই জাতের অর্কিডের একটি ফুল প্রায় ৯-১০ মাস ফুল ফোটা অবস্থায় থাকতে পারে। ফুলের রঙ ও বৈশিষ্ট্য প্রজাতিভেদে বিভিন্ন রকম হয়। 

আমাদের দেশে প্রায় প্রতিবছরই বৃক্ষমেলায় Grammatophyllum scriptum var. citrinum জাতের অর্কিডটি বেশ হৈ চৈ ফেলে দেয়। এই জাতের অর্কিডের একেকটি ফুলের মঞ্জরীতে প্রায় ১৫০টি পর্যন্ত সবুজ-হলুদ রঙের ফুল ফুটতে পারে। তাই ফুল ফোটা সম্পুর্ণ গাছ দেখতে খুবই আকর্ষণীয়। এছাড়া, ফুলে হালকা মিষ্টি ঘ্রাণ আছে। 

ঢাকার অনেক নার্সারিতে অর্কিড পাবেন। ধানমন্ডি, বনানী, উত্তরা, সাভার, গাজীপুরসহ সারাদেশেই রয়েছে অর্কিড উৎপন্নকারী অনেক ফার্ম। ধানমন্ডিতে রয়েছে DEBTEC, যারা ১৯৯৬ থেকে এর সাথে জড়িত। উত্তরার ৭ নাম্বার সেক্টরে রয়েছে স্কয়ারের একটি ফার্ম । এছাড়া, মাইক্রো অর্কিড নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে, যাদের শো-রুম রয়েছে মহাখালীতে। এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে সবচেয়ে ভালো হয় “অর্কিড সোসাইটির” মেম্বার হয়ে যাওয়া। মেম্বার হতে যোগাযোগ করুনঃ https://www.facebook.com/pages/Orchid-Society-of-Bangladesh/291241220998742 অর্কিড সংগ্রহ করে আপনার বারান্দাতেই করতে পারেন অর্কিড বাগান। 

কেনার সময় গাছ ভালো করে দেখে কিনুন। অসুখ বিসুখ থাকলে, পাতা হলুদ কিংবা আঠালো থাকলে সেই অর্কিড কিনবেন না। আর কেনার আগে নার্সারীর বিক্রেতার কাছ থেকে এর যত্ন সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিন। 

ঝুলন্ত টব, টব, ঝুলন্ত ঝুড়ি, কাঠের ফ্রেমে সাধারণত অর্কিড লাগানো হয়। অর্কিড লাগানোর টব ৬ ইঞ্চি গভীর হতে হবে। সেই সঙ্গে টবে থাকতে হবে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। টবের একেবারে নিচে ছোট ছোট কাঠের টুকরা ও কয়লা থাকতে হবে। এর উপরে থাকবে সুরকি ও খোয়া। তার উপরের স্তরে থাকবে নুড়ি পাথরের ছোট ছোট টুকরা। এর উপরের স্তরে থাকবে নারিকেলের ছোবড়া। তারপর দিতে হবে সার ও মাটির স্তর। গাছ লাগানোর আগে ফুটন্ত গরম পানি দিয়ে টব ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। অর্কিড গাছ সরাসরি রোদে রাখা যায় না। সরাসরি সূর্যের আলো লাগে না এমন স্থানে ঝুলিয়ে রাখুন অর্কিড গাছ। তবে যেই স্থানে রাখবেন সেই স্থানটি আলোবাতাস পূর্ন হতে হবে। অতিরিক্ত পানি দিলে অর্কিডের গোড়া পচে যায়। তাই অর্কিডে খুব মেপে পানি দেয়া উচিত। সরাসরি পানি না দিয়ে স্প্রে করে পানি দিলে সবচাইতে ভালো হয়। খুব বেশি গরম পড়লে এবং বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকলে অর্কিডের পাশে একটি পাত্রে পানি রেখে দিন। 

অর্কিড গাছেরও হতে পারে নানান ধরনের অসুখ বিসুখ। পাতা হলুদ হয়ে গেলে সূর্যের আলো থেকে দূরে ছায়ায় রাখুন কয়েকদিন। এক সপ্তাহ পানি দেবেন না এক্ষেত্রে। আর পাতা যদি পাতা পচে কালো হওয়া শুরু করে তাহলে বুঝবেন সেটা ছত্রাকের আক্রমণ। এক্ষেত্রে কালো হয়ে যাওয়া অংশ ফেলে দিন এবং নার্সারীতে গিয়ে গাছের সমস্যা অনুযায়ী কীটনাশক নিয়ে আসুন। 


তথ্যসূত্র- 
 http://www.sylhetexpress.com/lekhalekhiNew.php?writerID=4&getNewsid=23387 
এবং অন্যান্য ওয়েবসাইট 

ছবি- নেট


 :) :) @}-;-'-;-'-;--------

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Dombeya

পলক জুঁই

চামেলি